আবহাওয়া ডেস্ক :
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। বাংলাদেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় আগামী মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চল কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৭৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়েই এটি আঘাত আনতে পারে। যার গতিবেগ হবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০-৬০ কিলোমিটার। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
রোববার (২৩ অক্টোবর) আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ পূর্বাভাস থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এছাড়া আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানিয়েছেন, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলায় আঘাত হানবে সিত্রাং।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে রোববার (২৩ অক্টোবর) রাতেই ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি আগামী দুদিন সারা দেশে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। এ লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ারও আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। ভয়াবহ গতি সঞ্চয় করে আছড়ে পড়তে পারে এই সাইক্লোনটি। তবে অনেকেরই জানার আগ্রহ থাকে কেন এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়েছে ‘সিত্রাং’ বা কারা দিয়েছে এই নাম?
থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম ‘সিত্রাং’। এই ট্রপিকাল সাইক্লোনের আনুষ্ঠানিক নামকরণের দায়িত্ব ছিল থাইল্যান্ডের। সে দেশে ঘূর্ণিঝড়ের নাম রেখেছে ‘সিত্রাং’। ভিয়েতনামিজ ভাষায় এর অর্থ ‘পাতা’। ঝড়ের এমন বিচিত্র নাম এবারই প্রথম নয়। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হচ্ছে। এই নামগুলো দেয় ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিকাল অর্গানাইজেশনের আওতায় ১১টি সতর্কতা কেন্দ্র।
এগুলো একাধিক দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। চূড়ান্ত নাম অনুমোদনের জন্য এই সংস্থার আঞ্চলিক ট্রপিক্যাল সাইক্লোন কমিটির কাছে সব নাম জমা পড়ে। এরপর সেখান থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সেগুলো বাছাই এবং নির্বাচন করা হয়। একবার নাম চূড়ান্ত হয়ে গেলে তা বদল করা যায় না, যদি না ঝড়ের ফলে খুব বেশি মাত্রায় মৃত্যু অথবা সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়।
বর্তমানে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে। এক সময় বিশ্বের অন্য অঞ্চলের ঝড়ের নাম দেওয়া না হলেও যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ করা হতো। তবে সাইক্লোনের নামকরণের প্রথা চালু হয় অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের সময় থেকে। যেসব ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৯ মাইল ছাড়িয়ে যেত, তাদের জন্যই বিশেষ নাম বরাদ্দ করা হতো। ঘণ্টায় ঝড়ের গতিবেগ ৭৪ মাইল ছাড়িয়ে গেলে হারিকেন, সাইক্লোন বা টাইফুন হিসেবে ভাগ করা হয় ঝড়গুলোকে। বর্তমান যুগে এই তিনটির একটি হলে তবেই কোনো ঝড়কে একটি বিশেষ নাম দেওয়া হয়।
তবে শুরুতে আবহাওয়াবিদরা মিলে মেয়েদের নামে ঝড়গুলোর নামকরণ করতেন। ১৯৫৩ সালে ইউএস ওয়েদার সার্ভিস আনুষ্ঠানিকভাবে Q, U, X, Y, Z ব্যতীত A থেকে W পর্যন্ত আদ্যক্ষরে মেয়েদের নামে ঝড়ের নামকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে এসে নারীদের প্রতিবাদের মুখে অবশেষে ১৯৭৮ সালে ছেলেদের নামেও ঝড়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বছরের প্রথম ঝড়ের নাম রাখা হত A আদ্যক্ষর দিয়ে, দ্বিতীয় ঝড়ের নাম রাখা হত B আদ্যক্ষর দিয়ে, এভাবে চলতে থাকতো। আবার জোড় সালের বিজোড় ঝড়গুলোর নাম রাখা হত পুরুষের নামে আর বিজোড় সালের বিজোড় ঝড়গুলোর নাম রাখা হত নারীদের নামে।এক বছরে ২১ টির বেশি হারিকেন উৎপন্ন হলে (২০০৫ সালের মতো), গ্রিক বর্ণমালা অনুযায়ী নামকরণ করা হয়- হারিকেন আলফা, বিটা ইত্যাদি। বর্তমানে ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিকাল অর্গানাইজেশন বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঝড়ের নামের তালিকা গ্রহণ করে। এরপর প্রস্তাবিত সেই নামগুলোর থেকে বেছে নেওয়া হয় একটি। ভারত মহাসাগরের উত্তরাঞ্চলে উদ্ভূত ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের নামের তালিকা আঞ্চলিক কমিটির কাছে পাঠানোর দায়িত্ব রয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী।এর আগে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশের দেওয়া ‘ফণী’, পাকিস্তানের ‘তিতলি’, মালদ্বীপের ‘আইলা’, থাইল্যান্ডের ‘আমফান’। এবারের সাইক্লোনটির নামকরণও করেছে থাইল্যান্ড। এমনকি সিত্রাংয়ের পরবর্তী ঝড়ের নামও ঠিক করা আছে আগে থেকেই। এরপরের ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘মন্দোস’। যার নামকরণ করেছে সৌদি আরব। এরপরের ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘মোচা’। যেটি ইয়েমেনের দেওয়া।